মড়া ফুলের মধু - ঈশ্বরের নষ্ট ভ্রূণ - সৈকত মুখোপাধ্যায়

মড়া ফুলের মধু

সৈকত মুখোপাধ্যায়


কপালটাই শালা খারাপ। এমন একটা মেয়ে আমার প্রেমে পড়ল যাকে রিফিউজ করলাম ঠিকই, কিন্তু তার পরেও কাউকে 'কলার' তুলে সে-কথা বলতে পারলাম না। সে-কথা কোনো অবস্থাতেই কাউকে বলার মতন নয়। শুনলে বন্ধুবান্ধব হ্যাটা করত। বলত, ওই মালটাকে রিফিউজ করার আগেও দুবার ভেবেছিলিস নাকি? তুই তো তাহলে পারভার্ট, বিকৃতকাম। 

সত্যি মাইরি, এরকম মেয়ে আগে দেখিনি। মোমবাতির মতন চেহারা। রোগা, ঢ্যাঙা। বুক পাছা কিচ্ছু নেই। একেবারে নিমাই। গায়ের রংটাও মোমবাতির মতন ফ্যাকাশে। একদিন কথায় কথায় বলেছিল, জটিল কোনো স্ত্রীরোগ আছে। প্রচুর ব্লিডিং হয়। শুনে শালা গা গুলিয়ে উঠেছিল। 

মেয়েটার নাম সুমনা। বাসস্টপে আমাকে দেখেই বোধহয় প্রেমে পড়েছিল। আমি কিন্তু ওকে আগে কখনো খেয়াল করিনি। একদিন ও সোজা আমাদের বাড়িতেই চলে এসেছিল। কাঁধে একটা শান্তিনিকেতনী ঝোলা, গায়ে ল্যাপটানো রং-ওঠা সুতির শাড়ি। ঘামে ভেজা মুখ। প্রথমে ভেবেছিলাম ধূপকাঠি কিম্বা আচার বিক্রি করতে এসেছে বোধহয়। বলেছিলাম, একটু দাঁড়ান। মাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি। মুখ নীচু করে বলল, আপনার কাছেই এসেছিলাম। 

অবাক হয়ে বললাম, আমার কাছে? বলুন। 

আমার নাম সুমনা দাস। আমাকে তুমিই বলবেন। কয়েকটা কাগজ একটু অ্যাটেস্ট করে দেবেন? আমি আপনার বাড়ির পেছনে সুকান্তনগরে থাকি। 

সুকান্তনগর জায়গাটা আসলে বস্তি। খোলার চালের ঘরে গরিবগুর্বো মানুষজন থাকে। মেয়েটাকে দিব্যি মানায় ওখানে। এর কাগজ অ্যাটেস্ট করে দেওয়া ঠিক হবে? জাল-ফাল বেরোবে না তো? 

মেয়েটার চোখদুটো কিন্তু অন্যরকম। সেই চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম, দিয়ে যাও। কাল অফিস থেকে করে এনে রাখব। এইরকম সময়ে এসে নিয়ে যেও। 

সুমনা বিনীত হেসে বলল, কী বলে যে আপনাকে...। আসলে পরশুই একটা চাকরির ইনটারভিউ রয়েছে। আপনি না করে দিলে বিপদে পড়তাম।

পরদিন যখন সুমনা কাগজগুলো ফেরত নিতে এল তখন হাতে করে নিয়ে এল পাঁচটা রক্তগোলাপ। একদম ফ্রেশ। আমার হাতে গোলাপগুলো তুলে দিল। 

আমি বললাম, একী! 

লাজুক হেসে বলল, নিন না। আপনার জন্যেই এনেছি। 

ভদ্রতা করে বললাম, তোমার গাছের ফুল বুঝি? বাঃ, খুব সুন্দর। আমি ফুল খুব ভালোবাসি। গোলাপগুলো নাকের কাছে নিয়ে একটু গন্ধও শুঁকলাম। সুমনার মুখটা খুশিতে ভরে উঠল। 

ওই ভালোমানুষি করতে গিয়েই ফেঁসে গেলাম। মেয়েটা বোধহয় ভুল বুঝল। তারপর থেকে প্রায়ই এই ফুল, ওই ফুল নিয়ে এসে আমাকে দিয়ে যেত। কখনো কয়েকটা চাঁপা। কখনো গন্ধরাজ। কখনো একমুঠো বেল। দেখলেই বোঝা যায় দোকান থেকে কেনা নয়, গাছ থেকে টাটকা তোলা ফুল। 

ছেলেদের এসব ব্যাপার বুঝতে একটু সময় লাগে। মেয়েদের চোখে চট করে ধরা পড়ে। আমার বোন টুম্পা একদিন মুচকি হেসে বলল, যাগগে দাদামণি, তোর মতন অকালকুষ্মান্ডেরও একটা হিল্লে হয়ে গেল।

বললাম, মানে? 

সুন্দরী সুমনা তোর প্রেমে পড়েছে। মা-বাবাকে তাহলে বলি, একদিন সুকান্তনগরে গিয়ে কথাবার্তা পাকা করে আসতে?

টুম্পাকে গাঁট্টা মেরে তাড়ালাম ঠিকই, কিন্তু ওর কথা শুনে আমার মাথায় নিঃশব্দে বাজ পড়ল। ভেবে দেখলাম, তাই তো। অ্যানিমিক মেয়েটারও তো আমার সামনে এসে দাঁড়ালে গালে রক্ত ফোটে। কালি পড়া চোখের পাতা ভারী হয়ে আসে। এ তো ভালো লক্ষণ নয়। মেয়েটাকে প্রথম স্টেজেই কড়া ট্যাকল করতে হবে। নাহলে সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে কেস আরো জন্ডিস হয়ে যাবে। 

পরেরদিন সুমনা কয়েকটা রক্তকরবী নিয়ে এসে আমার হাতে দেওয়ামাত্র আমি জিগ্যেস করলাম, এইসব ফুল কোথা থেকে নিয়ে আসো সুমনা? তোমার বাগানের ফুল? 

সুমনা আহত গলায় বলল, দশফুট বাই আটফুটের ভাড়া ঘরে বাবা-মা, ভাইবোন মিলে পাঁচজন মানুষ কুকুর-কুন্ডুলি করে বাস করি। বাগান কোথায় পাব?

তাহলে?

লোকের বাগান থেকে তুলে আনি। এই আপনাদের মতন বড়লোকদের বাগান থেকেই। 

আমি যথাসাধ্য তেরিয়া গলায় বললাম—ছি ছি ছি! চুরি করা ফুল তুমি দিনের পর দিন আমাকে দিয়ে যাচ্ছ! কেন? কী দরকার? এইভাবে তো তুমি আমাকে চোরাইমালের খরিদ্দার বানাচ্ছ। 

খরিদ্দার? সুমনার চোখে তখন রাজ্যের বিস্ময়। বলল, আমি আপনাকে ফুল বিক্রি করি না তো!

ঠোঁট বেঁকিয়ে বললাম, নিজের কিছু থাকলে দিয়ে যেও, রেখে দেব। এইভাবে চুরি করা ফুল দিও না। আর শোনো। তুমি যা ভাবছ তা হবে না। ফুল ছাড়াও একজন মেয়ের আরো অনেক কিছু দেওয়ার থাকে। তোমার সে সব কিছুই নেই। 

সুমনা মুখ নীচু করে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকল। তারপর আস্তে আস্তে চলে গেল। 

বুকের ভেতর একটা আলপিনের খোঁচা টের পেলাম। কিন্তু ওসব কিছু নয়। বাংলা কথা যে বাংলা করেই বলে দিতে পেরেছি এটাতেই তখনকার মতন স্বস্তি পেলাম। দরজা বন্ধ করে ঘরে ঢুকে পড়লাম। 

সুমনাকে ফিরিয়ে দিয়ে কী ভালো যে করেছি, সেটা বুঝলাম পরেরদিন সুবোধবাবুর কথা শুনে। ভদ্রলোক আমাদের কয়েকটা বাড়ি পরেই থাকেন। খচাই বুড়ো বলতে যা বোঝায় একেবারে সেই জিনিস। সকালে ময়লাওলা থেকে শুরু করে রাতের নাইটগার্ড অবধি সকলের পেছনে টিক টিক করা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই। দুনিয়ার লোকের খুঁত খুঁজে বার করে পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করে যান। এটাই ওনার দু-নম্বর হবি। এক নম্বর হবি বাগান করা। এবং বলতে দ্বিধা নেই, সেটাও খুব ভালো করেন। 

শীতকালে যখন ওনার বাগান ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা আর ইনকায় আলো হয়ে থাকে তখন অনেকসময় সামনে দিয়ে যেতে যেতে ভাবি, তাহলে শয়তানের হাত দিয়েও ঈশ্বরীয় সৌন্দর্যের সৃষ্টি হতে পারে! কী আশ্চর্য!

সেই সুবোধবাবুই সেদিন রাস্তায় আমার সামনে হাতজোড় করে দাঁড়ালেন। 

বললাম, কী হল? 

উনি বললেন, ভগবান তোমার মঙ্গল করুন। বদমাশ মেয়েছেলেটাকে যেভাবে লাই দিয়ে মাথায় তুলেছিলে, ভেবেছিলুম বাগানের ফুলগুলো আর একটাও থাকবে না। 

অবাক হয়ে বললাম, কী বলতে চাইছেন পরিষ্কার করে বলুন তো। 

উনি ফাজিলের মতন হেসে বললেন, ছেলের বয়সি ছেলের সামনে সব কি আর পরিষ্কার করে বলা যায়? এইটুকু শুধু বলি, তোমার পুজোর ফুলের জোগান দিতে গিয়ে আমার রক্ত জল করা বাগানটা তছনছ হয়ে যাচ্ছিল। ভোর নেই, রাত নেই, ওই পেত্নীর মতন মেয়েছেলেটা আমার বাগান থেকে ফুল ছিঁড়ে নিয়ে তোমাকে দিয়ে আসত। কতবার তাড়া করেছি। ধরতে পারিনি। পারলে ঘেঁটি ধরে তোমার সামনে নিয়ে যেতাম। যাই হোক। গত কদিন সেই আপদটাকে আর দেখছি না। ভালো করে ঝাড় দিয়েছ, তাই না? ঠিকই করেছ। তোমাদের কত বড় বংশ। কত বড় চাকরি করো তুমি। ওই বস্তির মেয়ের সঙ্গে মেলামেশা করা কী তোমাকে মানায়?

আমার মুখে কথা সরার আগেই সুবোধবাবু পাড়ার কাউন্সিলর খেতুদাকে তাড়া করে অন্যদিকে চলে গেলেন। বোধহয় কলের জল কেন এত সরু পড়ছে তাই নিয়ে দু-কথা শোনাবেন। আমি অধোবদন হয়ে বাড়ি ফিরলাম। ভাবলাম, এই একটা বার অন্তত খচাই বুড়ো ঠিক কথাই বলেছে। পেডিগ্রির তফাতটা অস্বীকার করা যায় না। একটা দামড়া, কলেজে-পড়া মেয়ে লোকের বাগান থেকে ফুল চুরি করত কেমন করে?

তার ঠিক দুদিন বাদে ভোরবেলায় উঠে মশারির দড়ি খুলছি। আমার একতলার ঘরের রাস্তার দিকের জানলার কাছ থেকে মেয়েদের গলায় ডাক ভেসে এল—শুনছেন? 

তাকিয়ে দেখি জানলার সামনে সুমনা দাঁড়িয়ে রয়েছে।

প্রচণ্ড বিরক্ত হলাম। বললাম, কী ব্যাপার? মানুষের প্রাইভেসি বলে একটা জিনিস আছে জানো না? এইভাবে জানলা দিয়ে উঁকি মারছ কেন? 

এইগুলো আপনার জন্যে নিয়ে এসেছি। নিয়ে নিন। আমি চলে যাচ্ছি। সুমনা ডানহাতটা উঁচু করে দেখাল। ওর হাতে টাটকা রজনীগন্ধার দুটো মোটা তোড়া। 

মাথায় রক্ত চড়ে গেল। চেঁচিয়ে উঠলাম, গেট আউট। গেট আউট আই সে। লজ্জা করে না? চুরি করা ফুল দিতে এসেছ? কার বাগান থেকে চুরি করে আনলে? সুবোধবাবুর বাগান থেকে? তুমি জানো, উনি আমাকে দুদিন আগে রাস্তায় দাঁড়িয়ে কী অপমানটা করেছেন। ফুল দিচ্ছ, ফুল? ফুল দিয়ে মন পাবে?

সুমনা নির্লজ্জের মতন হেসে বলল, ফুল দিয়ে মন পাব কেন? মন দিয়েছি বলে ফুল দিচ্ছি। ভয় নেই এগুলো আমার নিজের ফুল। তুমি নাও।

এই প্রথম ও আমাকে তুমি বলে কথা বলল। এই প্রথম ও ভোরের আলোর মধ্যে দাঁড়িয়ে বলল, আমাকে ভালোবাসে। এক মুহূর্তের জন্যে মনটা কেমন আনচান করে উঠল। তার পরেই সেই সাময়িক দুর্বলতা ঝেড়ে ফেলে নীচু গলায় বললাম, নিজের ফুল? কিনেছ নাকি? 

না, কিনিনি।

তাহলে? বাগান করেছ? ক'কাঠার বাগান কিনলে? নাকি, বস্তির কোনো প্রেমিক দিয়েছে?

সুমনা দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরল। মনে হল কান্না চাপার চেষ্টা করছে। তারপর ধরা গলায় ফিসফিস করে বলল, বেশিক্ষণ দাঁড়াতে পারব না। এখানে রেখে গেলাম। তুমি ফুলদানিতে সাজিয়ে রেখো কিম্বা ডাস্টবিনে ফেলে দিও—যা তোমার ইচ্ছে। কিন্তু একটা কথা সত্যি বলছি, এগুলো আমার নিজের ফুল। একদম আমার নিজের।

সুমনা চলে গেল। আমি জানলার সামনে থেকে রজনীগন্ধার তোড়া দুটোকে তুলে এনে রান্নাঘরের ডাস্টবিনের পাশে রেখে এলাম। বাড়ির কাজের লোক ময়লাওলার ভ্যানে তুলে দেবে। তারপর তাড়াহুড়ো করে বাজারে বেরোলাম। দুধ আর রুটিটা সকালেই না নিয়ে এলে মা আমাকে ব্রেকফাস্ট বানিয়ে দিতে পারে না। তাই এই কাজটা আমাকে রোজই করতে হয়। 

সুকান্তনগরের মধ্যে দিয়েই বাজারের দিকে যেতে হয়। যেতে যেতেই একটা খোলার ঘরের সামনে দেখলাম বস্তির লোকেদের ভিড়। ভিড় কাটিয়ে যেতে গিয়ে পা দুটো জমে পাথর হয়ে গেল। মাথাটাও কেমন যেন ঘুরে গেল। একটু সামলে নিয়ে আবার তাকালাম ভিড়ের মাঝখানে নামিয়ে রাখা খাটিয়াটার দিকে। 

না, কোনো ভুল নেই। যে মৃতদেহটা খাটিয়ার ওপরে শোয়ানো রয়েছে সেটা সুমনার। সেই মোমবাতির মতন সাদা মুখ, চুল উঠে যাওয়া চওড়া কপাল। বড়জোর পনেরো মিনিট আগেই ওই মুখ আমি আমার ঘরের জানলায় দেখেছি। 

না, এটা হতে পারে না। কোথাও একটা গন্ডগোল হচ্ছে। সুমনার যমজ বোন ছিল কি? ছিল নিশ্চয়। ব্যাপারটা না বুঝে চলে যাওয়া যায় না। ভিড়ের মধ্যে একজন চেনা লোককে দেখতে পেলাম। রিকশা চালায়। বিশু না বিধু কী যেন নাম। ওকেই জিগ্যেস করলাম, কী হল ভাই?

আর বলেন কেন দাদা? আমাদের নিরঞ্জনদার মেয়ে। বাজারে সবজি বেঁচে যে নিরঞ্জনদা, চেনেন তো?

শুকনোমুখে ঘাড় নাড়লাম। 

এই অবস্থায় থেকেও কলেজ পাশ করেছিল। চাকরি খুঁজছিল। তারপর কী যে হল, কাল সন্ধেবেলায় ঘুমের ওষুধ খেয়ে...। 

ভিড়ের অন্যদিক থেকে কে একজন চ্যাঁচাল—তোরা আর কত দেরি করবি রে জগা? শালা, কাল রাত থেকে গর্দিশ চলছে। থানা, পোস্টমটেম সব একা হাতে সামলালাম। এখন তোরা যদি খাটিয়াটাও না তুলতে পারিস তাহলে আর কী বলব?

উত্তরে এদিক থেকে আরেকজন বিরক্ত গলায় বলল, দাঁড়াও না দেবুদা। দেখছ তো আমাদের বস্তিটা কেমন ছ্যচড়ার রাজত্ব হয়েছে। মড়ার খাটিয়ায় বাঁধার জন্যে দু-বান্ডিল রজনীগন্ধা এনে পেছনের রোয়াকে রেখেছিলাম—তাও শালা কে ঝেপে দিল। আবার কিনতে পাঠিয়েছি। এলেই রওনা দিয়ে দেব। 

সাদা চাদর দিয়ে মোড়া রোগা শরীর আর মোমবাতির মতন নীরক্ত মুখটার দিকে আরেকবার তাকিয়ে দেখলাম। নাঃ, সুমনাই। কোনো ভুল নেই। ঠোঁটের কোনায় ওই যে কান্নার মতন সামান্য হাসি লেগে আছে ওটা পনেরো মিনিট আগেও ছিল। সত্যিই আজ ও ফুল চুরি করেনি। বলেছিল না, এ আমার নিজের ফুল? একশিশি ঘুমের ওষুধের দামে কেনা দুটো ফুলের তোড়াই ভোর-ভোর আমাকে দিয়ে এসেছে।

বাজার যাওয়া হল না। ভিড়ের মধ্যে থেকে বেরিয়ে আবার বাড়ির দিকেই পা চালালাম। এখনো নিশ্চয়ই ময়লাওলার গাড়ি আসেনি, রজনীগন্ধার তোড়াদুটো নিশ্চয় রান্নাঘরের কোণেই পড়ে আছে। 

প্রার্থনা করছিলাম, যেন থাকে।

দুটো ফুলদানি কি আর খুঁজলে পাব না?


Comments