ঈশ্বরের নষ্ট ভ্রূণ
সৈকত মুখোপাধ্যায়
ঈশ্বরের নষ্ট ভ্রূণ
এক
অনেকগুলো ঠেক-এ ঠোক্কর খাওয়ার পর শেষমেশ আমরা ভদ্রকালী শ্মশানে ঢুকে থিতু হয়েছিলাম। তার আগে নিরিবিলি নেশা করা যায় এমন একটা জায়গার খোঁজে বিস্তর ঘুরেছি। কিন্তু তখনকার দিনে উত্তরপাড়ার মতন মফস্বল শহরে, এমনকী রাতের বেলাতেও, প্রাইভেসির বড় অভাব ছিল। ধরুন স্টেশনের ওভারব্রিজ। সেখানে সিঁড়ির ধাপগুলো দখল করে বসে থাকত গুচ্ছের প্রেমিক-প্রেমিকা। সামান্য রুমাল কিম্বা সিগারেট-প্যাকেটের আড়ালে তারা এমন সব কাণ্ডমাণ্ড করত যে, সেক্সুয়াল-জেলাসিতে আমাদের কথা বন্ধ হয়ে যেত।
অন্যদিকে গঙ্গার ঘাটগুলোয় ছিল বুড়োবুড়িদের ভিড়। একদিন তাদের মধ্যে এক মক্কেল হঠাৎ আমার ঘাড়ের কাছে দাঁড়িয়ে বলে উঠলেন, তুমি মধুদার নাতি না? ছি ছি ছি! অমন দেবতুল্য মানুষের বংশধর হয়ে মদ্যপান করছ? সেদিন থেকে গঙ্গার ঘাটকেও নমস্কার।
রেললাইন টপকে কয়েকদিন ইটখোলার মাঠে গিয়ে বসেছিলাম। ওখানে আবার এমন সব এলিমেন্টসদের আনাগোনা দেখলাম যে, সত্যি কথা বলতে কি ভয়ই পেয়ে গেলাম। ঠেক মারতে গিয়ে কি ছুরি খেয়ে মরব?
তখন আমাদের চারজনেরই তেইশ-চব্বিশ বছর বয়স। সকলেই একটা যেমন-তেমন চাকরিও পেয়ে গেছি। দুঃখের মধ্যে, প্রেম করতে গিয়ে চারজনেই চার-রকমভাবে হাফসোল খেলাম। আড্ডায় সেইসব দুঃখের কথাই শেয়ার করতাম।
পেটে একটু মদ থাকলে দুঃখের কথাগুলো বেশ কবিতার মতন সুন্দর হয়ে ওঠে। তাই শ্মশানঘাটে ঢোকার আগে জিটি রোডের ওপাড়ে বাবুল সাহার দোকান থেকে একটা সেভেন-ফিফটি ও.টি.র বোতল কিনে নিতাম। আমরা চারজন আর লেবুদা। পাঁচজনের ওতেই হালকা করে হয়ে যেত। হালকাই ভালো। মধ্যবিত্তের সন্তান, রাত হলে বাড়ি ফিরতে হত।
লেবুদাও বেশি খেত না। ওর ছিল শুকনো নেশা। বিড়ির মধ্যে গাঁজা পুরে খেত। আমাদের কম্পানি দেওয়ার জন্যে দু-এক ঢোক ভিজে। এমন সংযমের কারণ জিগ্যেস করলে, ওর সেই মার্কামারা স্নিগ্ধ হাসিটা হেসে বলত, বোঝো না ভাই? ডিউটিতে আছি। মাতাল হয়ে গেলে চলবে?
ডিউটিতে থাকত সেটা ঠিক। লেবুদা মিউনিসিপ্যালিটির মাইনে পাওয়া ডোম, চব্বিশঘণ্টাই ওর ডিউটি। কিন্তু গাঁজা খেয়ে যে-ডিউটি করা যায়, সেটা মদ খেয়ে কেন করা যাবে না, তা ঠিক বুঝতাম না।
আমরা কিন্তু প্রতিদিন শ্মশানে আড্ডা মারতে যেতাম না। বড়জোর মাসে একবার। কখনো তাও হত না। আসলে চারজনের একসঙ্গে ছুটি পাওয়াটা বড় একটা হয়ে উঠত না। আমাদের মধ্যে পঙ্কার পোস্টিং ছিল দুর্গাপুরে, ও রেলে চাকরি করত। ভোকু ছিল আরও দূরে—কুচবিহারে। ওখানকার সরকারি হাসপাতালের প্যাথোলজিস্ট। আমি আর নয়ন অবশ্য কলকাতাতেই চাকরি করতাম। কিন্তু পঙ্কা কিম্বা ভোকু না এলে আড্ডা মারার উৎসাহ পেতাম না।
এসব অনেক বছর আগেকার কথা। বয়স বেড়েছে। বিয়ে-থা করেছি। হু-হু করে বছর গুলো কেটে যাচ্ছে। তবু কখনো কখনো একলা বারান্দায় বসে মনে পড়ে যায় ভদ্রকালী শ্মশানের সেই সন্ধেগুলোর কথা। আলো-আঁধারিতে ঢাকা বিশাল চত্বর। বড় বড় কয়েকটা নিম আর বেলগাছ। চত্বরের দক্ষিণদিকে শ্মশানকালীর মন্দির। মন্দিরের পেছনদিকে কাঠের চিতায় দাহ করার জায়গা আর ডানদিকে একটা নতুন বাড়িতে ইলেকট্রিক চুল্লি।
ওই দিকটাতেই শবযাত্রীদের আনাগোনা ছিল। আমরা বসতাম উত্তর প্রান্তে একটা পুরোনো ছাউনির নীচে। পেছনে ছিল চ্যালাকাঠের ডিপো আর লেবুদার থাকার ঘর। সেদিকটায় লেবুদা ছাড়া আর কারুর যাতায়াত ছিল না। আমাদের ঠিক পায়ের নীচ দিয়ে বয়ে যেত ভাগীরথী। নদীর ওপাশে জুটমিলের সার-সার আলো জলের ওপর এঁকেবেঁকে খেলা করত। স্রোতের অবিরাম ছলাৎছল শব্দে কেমন যেন ঘোর লেগে যেত। সেই ঘোর ভাঙত হঠাৎ ভেসে আসা হরিধ্বনিতে।
আমাদের তখনকার বিবাগী-মনের সঙ্গে বেশ মানিয়ে যেত ওই পরিবেশ। সেইজন্যেই জায়গাটার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। মড়াপোড়ার গন্ধটা নাকে সয়ে যেতে বেশিদিন লাগে না।
লেবুদা ছিল একটা ইন্টারেস্টিং ক্যারেকটার। ঘাড় অবধি লুটিয়ে পড়া কাঁচাপাকা চুল। তীক্ষ্ন নাক, টানাটানা চোখ। গায়ের রং বেশ ফরসা। 'ডোম' বলতে যে ছবিটা চোখের ওপর ভেসে ওঠে তার সঙ্গে কোনো মিল ছিল না। নেশা চড়ে গেলে পঙ্কা ওকে হরিশ্চন্দ্র বলে ডাকত। বলত, তুমি বাবা কোথাকার শাপভ্রষ্ট রাজা, এখানে ডেকমাস্টারি করছ?
লেবুদা উত্তর না দিয়ে মুচকি মুচকি হাসত।
উত্তর দেওয়ার সময়ও পেত না অবশ্য। একটা অ্যাসিস্ট্যান্টকে সঙ্গে নিয়ে চরকির মতন এদিক থেকে ওদিক ঘুরে দাহকার্য সেরে বেড়াত লেবুদা। ও-ই মৃতের আত্মীয়ের হাতে গঙ্গামাটির ডেলা ধরিয়ে মন্ত্র পড়াচ্ছে, ও-ই চিতা সাজাচ্ছে। আবার ইলেকট্রিক চুল্লিতে দাহ করতে হলে চুল্লির লিভার টেনে ফার্নেসের ভেতরে ডেড-বডি ঢোকাচ্ছে সেই লেবুদা। মানে লেবুদাই ছিল ভদ্রকালী শ্মশানের অল-ইন-অল।
তার মধ্যেই একবার করে আমাদের চালার নীচে এসে একঢোক মেরে দিয়ে মুখে একমুঠো চানাচুর ঢুকিয়ে আবার দৌড়ে চলে যাচ্ছে চিতার দিকে। আমরা দূর থেকে অবাক হয়ে দেখতাম, গনগনে আগুনকে ঘিরে ওর নর্তকের মতন ক্ষিপ্র নড়াচড়া। হাতে একটা লম্বা বাঁশ। তাই দিয়ে উলটে পালটে ভেঙে ফাটিয়ে একেকটা আস্ত মানুষের শরীরকে দু-ঘণ্টার মধ্যে একবালতি কয়লা বানিয়ে দিচ্ছে আমাদের ছদ্মবেশী হরিশ্চন্দ্র।
ভালো ছিল, লেবুদা মানুষটা খুবই ভালো ছিল। আমরা যে তিনবছর ওখানে গিয়েছি, কোনোদিন লেবুদাকে কোনো পার্টির সঙ্গে পয়সা নিয়ে জোরজুলুম করতে দেখিনি। সবসময়ে কথা বলত নীচুগলায়, শান্তস্বরে। কথার মধ্যে এমন সব শব্দ থাকত, যেসব শব্দ ঠিকঠাক ব্যবহার করতে গেলে বেশ ভালো বাংলা জানতে হয়। মনে হয় চণ্ডালের কাজটাকে শুধু কাজ নয়, ধর্ম হিসেবেই মানত লেবুদা। এমনিতে অত নীচু গলায় কথা বললেও, যখন মৃতের আত্মীয়ের হাতে জ্বলন্ত পাটকাঠি ধরিয়ে দিয়ে মৃতদেহকে প্রদক্ষিণ করাত, তখন আবেগে ওর গলা বেশ উঁচুতে উঠে যেত। শ্মশানের এক কোণে বসে শুনতে শুনতে ওর সেই দাহমন্ত্র আমাদেরও মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল—
কৃত্বা তু দুষ্কৃতং কর্ম জানতা বা অপি জানতা
মৃত্যুকালবশং প্রাপ্য নরং পঞ্চত্বমাগতম
ধর্মাধর্ম সমাযুক্তং লোভ মোহ সমাবৃতম
দহেয়ং সর্বপাত্রাণি দিব্যান লোকান স গচ্ছতু।
এই লেবুদার মুখে ওই শ্মশানঘাটে বসেই একদিন একটা অদ্ভুত ঘটনার কথা শুনেছিলাম। লেবুদা বলেছিল ওই ঘটনা নাকি ওকে মানুষ হিসেবে বদলে দিয়ে গেছে। দুনিয়াটাকে ও আগে যে-চোখে দেখত এখন আর সেই চোখে দ্যাখে না।
সেদিন লেবুদা যা বলেছিল পুরোটাই এখনো মনে আছে। সচরাচর যে এমন অভিজ্ঞতা হয় না, সে কথা ঠিক। তবে তারপর যে যেমন চোখে দ্যাখে। ভোকু যেমন সেদিন সব শোনার পরে বাড়ি ফেরার সময় খুব হেসেছিল। তেঁতো হাসি। বলেছিল, লেবুদা একটা গান্ডু।
আচ্ছা, ভোকুর কথা পরে বলছি। আগে লেবুদা কী বলেছিল সেটাই বলি।
দুই
রাত তখন সাড়ে আটটা-ন'টা হবে। আমরা যথারীতি ওই চালাঘরটার মধ্যে বসে আড্ডা মারছিলাম। সন্ধে থেকেই আবহাওয়া গুমোট ছিল, এইবার বৃষ্টি নামল। ভাদ্রমাসের বৃষ্টি, বেশিক্ষণ হয় না, কিন্তু যতক্ষণ হয় ততক্ষণ তার তোড় দ্যাখে কে।
বোধহয় সেই তাণ্ডব বৃষ্টির চোটেই শ্মশান সেদিন কিছুক্ষণের জন্যে শুনশান হয়ে গিয়েছিল। লেবুদার হাতে কাজ ছিল না। ও আমাদের পাশে এসে বসল। পঙ্কা হঠাৎ বলে বসল, লেবুদা, এতদিন শ্মশানে কাজ করছ, কখনো কিছু দ্যাখোনি?
লেবুদা ভুরু কুঁচকে পালটা প্রশ্ন করল, কিছু মানে?
মানে এই ইয়ে আর কি...ওই সবাই যা বলে...ভূতটুত?
তোমাদের মাথায় ভূতের কথাই আগে আসে কেন? ঈশ্বরের কথা আসে না?
ভোকুটা আমাদের মধ্যে একটু বেশি ফক্কর। বলল, বোঝোই তো, আমরা পাপী-তাপী মানুষ। ঈশ্বরের কীই-বা জানি? তুমি দেখেছ নাকি তাঁকে?
লেবুদা গম্ভীরগলায় বলল, দেখেছি। ওই ইলেকট্রিক চুল্লির মধ্যেই তাঁকে দেখেছি। মরা ঈশ্বর। ঝলসে কুঁকড়ে গিয়েছিলেন। তবু চিনতে ভুল হয়নি।
আমরা অন্ধকারের মধ্যেই যতটা খুঁটিয়ে পারি লেবুদার মুখচোখ স্টাডি করলাম। অন্যদিনের চেয়ে একটুও বেশি নেশাগ্রস্ত বলে তো মনে হল না। লেবুদা আমাদের মনের ভাব বুঝতে পেরে বলল, কী ভাবছ? বাওয়াল করছি?
না না। আমরা সমস্বরে বলে উঠলাম। আসলে তোমার কথাটা একটু ধাক্কা দেওয়ার মতন এটা তো মানবে?
ঠিক। ধাক্কা। এরকম একটা ধাক্কা দিয়েই তিনি আমাদের চোখ খুলে দেন। ওই দিনটার পর থেকে এই শ্মশানঘাটটাকে আমার মন্দিরের মতন মনে হয়। যারা এখানে আসেন, তাঁদের মনে হয় তীর্থযাত্রী। মনে হয় চোখের জলে তাদের পা ধুইয়ে দিই।
আমি বললাম, লেবুদা প্লিজ। কী হয়েছিল একটু খোলসা করে বলবে?
লেবুদা বলল, বছর দুয়েক আগের কথা বলছি। তোমরা তখনো এখানে যাতায়াত শুরু করোনি। এরকমই বর্ষার দিন ছিল। জন্মাষ্টমীর আশেপাশে একটা দিন। কালুয়া, আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট, ওর সেদিন জ্বর হয়েছিল। পুরো শ্মশানে সেদিন আমরা দুটি লোক। মন্দিরের চাতালে আমি একা চুপচাপ বসে আছি, আর ওই গেটের কাছে কাউন্টারে বসে আছেন ঘাটবাবু। এইসময়েই একটা মড়া এল।
খাটিয়ায় চড়ে নয়, এল পুলিশের কালো ভ্যানগাড়িতে। দুজন হাবিলদার গাড়ি থেকে প্লাস্টিকের চাদরে মোড়া বডিটাকে নামিয়ে চুল্লিঘরের সামনে শোয়াল। আর দুজন কাগজপত্র নিয়ে গেল ঘাটবাবুর অফিসে। আরো একজন মড়া ছুঁয়ে বসে রইলেন। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল সাধক মানুষ। বয়স বেশি না। কুচকুচে কালো দাড়ি। মাথার চুল চুড়ো করে বাঁধা। পরনে গেরুয়া ফতুয়া আর গেরুয়া ধুতি লুঙ্গির মতন করে পরা।
একটু বাদে ঘাটবাবুর ডাক শুনতে পেলাম। কাউন্টারে বসেই গলা তুলে আমাকে ডাকছিলেন। ভিজতে ভিজতে ওনার কাছে গেলাম। উনি বললেন, যে মেয়েটাকে পোড়াতে এনেছে সে গাড়ি চাপা পড়েছে। অ্যাকসিডেন্টটা হয়েছে নর্থবেঙ্গলে। মধুপুর না কি যেন নাম বলছে জায়গাটার। যাই হোক, পোস্টমর্টেম হয়ে গেছে। ডাক্তারের সার্টিফিকেট, পুলিশের সার্টিফিকেট সব জমা দিয়েছে। পাশ করে দিই, কী বল?
আমি ওনার কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বললাম, নর্থবেঙ্গলে অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে? তাহলে উত্তরপাড়ায় নিয়ে এল কেন?
ঘাটবাবু ব্যস্ত হয়ে বললেন, আহা, বাড়ি যে এদিকেই। কোন্নগর নবগ্রামে। পঞ্চায়েতের রেসিডেন্সিয়াল সার্টিফিকেটও জমা দিয়েছে।
বললাম, তাহলে আর কী? শুরু করে দিই। কাঠের আগুন না ইলেকট্রিক?
একজন হাবিলদার বলল, চুল্লিতেই দিয়ে দিন। তাড়াতাড়ি হবে। আমাদের আবার আজকেই ফিরতে হবে।
ফিরে এলাম বডিটার কাছে। সাধুমতন লোকটাকে দেখে কষ্ট হচ্ছিল। মুখচোখ থমথমে। প্রচণ্ড একটা কষ্ট যেন বুকের ভেতরে চেপে রেখেছিল। মনে হচ্ছিল মৃত্যুশোকের থেকেও বেশি কোনো যন্ত্রণা। জিগ্যেস করলাম, কে হন আপনার?
উত্তর এল—স্ত্রী বললে স্ত্রী। সাধনসঙ্গিনী বললে সাধনসঙ্গিনী।
উনি মারা গেলেন কীভাবে?
কী বলব ভাই। কপাল। মধুপুরের রাস্তা ধরে দুজনে ফিরছিলাম। মধুপুর চেনেন তো? কুচবিহারের কাছে। শঙ্করদেবের সমাধি আছে ওখানে। আমাদের বৈষ্ণবদের কাছে তীর্থক্ষেত্র। ওখানেই গিয়েছিলাম দুজনে। হঠাৎ একটা গাড়ি ওকে পিষে দিয়ে চলে গেল। তারপর থানা পুলিশ। হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে কাটাছেঁড়া। ভাগ্যিস কুচবিহার থানার এই পুলিশভাইরা সারাক্ষণ সঙ্গে সঙ্গে ছিলেন, তাই সামলাতে পেরেছি। ওনারাই ভ্যানগাড়িতে করে এই অবধি এনেছেন আমাদের। অনেক দয়া ওনাদের।
কথা বলতে বলতে হঠাৎই লোকটার গলা ভেঙে গেল। সে একহাতে বডিটা ছুঁয়ে অন্যহাতে চোখ মুছতে শুরু করল।
বললাম, চলুন। কেঁদে আর কী হবে? যে গেছে সে তো আর ফিরবে না। আমি আর উনি মিলে ধরাধরি করে বডিটাকে চুল্লির সামনে নিয়ে এলাম। বৃষ্টির জন্যে বডিটা প্লাস্টিক দিয়ে ঢাকা ছিল। দড়ির বাঁধন খুলে সেই ঢাকা সরিয়ে দিতেই বুকটা কেমন করে উঠল। বউমানুষ শুনে মনে মনে একটা ছবি এঁকেছিলাম। কিন্তু এ তো দেখছি নিতান্তই একটা বাচ্চা মেয়ে। বড়জোর ষোলো-সতেরো বছর বয়স হবে। মুখটা কালোর ওপরে সুন্দর। টানা টানা ভুরু, পাতলা ঠোঁট। এত যন্ত্রণা, এত রক্তপাত, কাটাছেঁড়া —সেসবের ছাপ মুখে পড়েনি। মনে হচ্ছিল ঘুমিয়ে আছে।
একটা লালপেড়ে সাদা শাড়ি আলতো করে শরীরের ওপর ঢাকা দেওয়া ছিল। হঠাৎ একটা জোলো হাওয়ার দমকা এসে সেটাকে সরিয়ে দিতেই দেখলাম, পোস্টমর্টেমের ব্যাপারটা ঠিক। গলা থেকে তলপেট অবধি চট-সেলাইয়ের ফোঁড়ের মতন ক্রশ-সেলাই। ও আমাদের চেনা সেলাই। হাসপাতালের মর্গ থেকে লাশ এলে ওই সেলাই নিয়েই আসে। সত্যি কথা বলতে কি, একটু নিশ্চিন্তই হলাম। পোস্টমর্টেমের পর ছাড়া পেয়েছে মানে কোনো গন্ডগোল নেই।
বেশি সময় নিলাম না। গোঁসাইবাবাকে চটপট মন্ত্র পড়িয়ে, মেয়েটার বডি চুল্লির মধ্যে ঢুকিয়ে দিলাম। বললাম, মিনিট পঁয়তাল্লিশ লাগবে। চলুন বাইরে গিয়ে বসি।
এই চালাটার নীচেই সেদিন দুজনে এসে বসেছিলাম।
লেবুদার কথার মধ্যে বাধা দিয়ে নয়ন বলল, তুমি যে বলছিলে ঈশ্বরের মৃতদেহ। এ তো রক্তমাংসের নারীশরীরের কথা বলতে লেগেছ।
লেবুদা কখনো যা করে না, বোতল থেকে ঢক ঢক করে র-হুইস্কি গলায় ঢেলে বলল, চুপ করে শুনে যাও যা বলছি। লেবু ডোম মিথ্যে বলে না।
লেবুদা বলে চলল—এই চালাটার নীচেই সেদিন বসেছিলাম। এমনই আকাশ ভেঙে বৃষ্টি পড়ছিল সেদিন। আমার পাশ থেকে মেয়েটার স্বামী হঠাৎ বলে উঠলেন, আমাদের ঘরে গোপাল আসছিলেন। তাঁর আর আসা হল না।
আপনার স্ত্রী বুঝি সন্তানসম্ভবা ছিলেন?
কান্নাহাসি মেশানো কেমন যেন একটা শব্দ বেরোল ওনার গলা থেকে। তিনি বললেন, সঙ্গম বিনে সন্তান হবে কেমন করে ভাই? আমরা এখনো সাধনার সেই স্তরে যাইনি যে মিলিত হব। আর ঈশ্বর কি কারুর সন্তান হন? তিনি হলেন সখা।
কিছু বুঝতে না পেরে বললাম, ও।
ওই কপালপোড়া মেয়ে, ওই আমার রাইবিনোদিনী—ও অষ্টপ্রহর স্বপ্ন দেখত ওর পেটে গোপাল আসছে। কত বোঝাতাম, ওরে অমন কথা বলিস না। আমরা কীটের কীট। তোর কি শচীমায়ের মতন পুণ্য আছে?
কিছুতেই বুঝত না, জানেন ভাই। খালি ওই এক কথা। আমি স্বপ্ন দেখেছি, গোপাল আমার পেটে আসছে। আমি যে তার নড়াচড়া টের পাই গো। বললে বিশ্বাস করবেন না, মধুপুরের মেলা থেকে জোর করে আমাকে দিয়ে বেতের দোলনা কেনাল।
দেখুন, আমাদের বয়সের তফাত তো অনেককখানি। বিনোদিনীর আঠেরো আর আমার পঁয়ত্রিশ। তাই কখনো কখনো ওকে নিজের মেয়ের মতনই লাগত। মেয়ের আবদার মেটানোর মতন করেই সেই দোলনা কিনেও দিলাম। আর ওই দোলনাটাকে বুকে জড়িয়েই আমার বউ গাড়ির তলায় চলে গেল।
আবার হু-হু করে কেঁদে উঠলেন সাধুবাবা।
তিন
একবার উঠে গিয়ে ফার্নেসের টেম্পারেচারটা বাড়িয়ে দিয়ে এলাম। হাবিলদার চারজন দেখলাম মন্দিরের চাতালে বসে রুটি-মাংস খাচ্ছে। বললাম, একটু ওদিকে গিয়ে খান। তারপর আবার এসে বসলাম সাধুবাবার পাশে। বললাম, হয়ে এসেছে। আর পনেরো মিনিট।
উনি কিছু না বলে শূন্য চোখে নদীর দিকে চেয়ে রইলেন।
তারপর হঠাৎ আমাকে জিগ্যেস করলেন, লেবুবাবু, আপনি সিদ্ধাই মানেন?
বললাম, সেটা কাকে বলে তাই তো জানি না। জানলে তবে না মানার কথা ওঠে।
উনি হতাশভাবে মাথা নাড়িয়ে বললেন, বিনোদিনীর কিছু কিছু সিদ্ধাই ছিল। ওর মনটা ছিল এমন একটা তারে বাঁধা, যে-ধাপে উঠতে আমাদের পাঁচবছর লাগে, সেই ধাপে ও পাঁচদিনের সাধনায় পৌঁছিয়ে যেত। বললে বিশ্বাস করবেন না, ওর সঙ্গে কণ্ঠিবদলের পর থেকে অনেকদিন আমি ভোররাতে ঘরের বাইরে বাঁশির সুর শুনতে পেয়েছি। হঠাৎ হঠাৎ কদমফুলের গন্ধে ঘুম ভেঙে যেত। অথচ ধরুন তখন শীতকাল। কদমের ক-ও নেই কোথাও।
বুঝলে নয়ন, আমরা ভাই বংশগত ডোম। আমার মা এই শ্মশানের চিতার কাঠে ভাত রেঁধে আমাদের খাইয়েছে। শরীর ছাই হয়ে গেলে যে আর কিছুই বাকি থাকে না সেটা আমার থেকে ভালো কে জানে? অন্তত তখন অবধি তাই জানতাম। তবু সেই সাধুবাবার কথা শুনে সেদিন আমার কেমন যেন গা ছমছম করছিল।
তারপরেই তিনি যা বললেন সেটা আরো মারাত্মক। বললেন, বিনোদিনীর অ্যাকসিডেন্টের তিনদিন আগে, মানে গত বুধবার রাতে পাশাপাশি বিছানায় শুয়েছি। বিনোদিনী হঠাৎ আমার হাতটা টেনে নিয়ে নিজের তলপেটের ওপর রাখল। বলল, দ্যাখো, আমার গোপাল আমার পেটের মধ্যে নড়াচড়া করছেন। এই দেখুন, বলতে বলতে আমার গায়ের লোম খাড়া হয়ে যাচ্ছে। সত্যিই আমার হাতের নীচে ওর পেটের ভেতরে একটা কিছু ঘাই দিয়ে উঠল।
পঙ্কা, তুমি ভোকুকে চোখ মারলে কেন আমি বুঝতে পারছি। আমার মনের ভেতরেও ওই সন্দেহটাই জেগেছিল। পাপ মন তো আমাদের। ভেবেছিলাম, নচ্ছার মেয়ে, স্বামীর সঙ্গ না পেয়ে অন্য কারুর বিছানায় শুয়ে পেট বাধিয়েছে। তারপর নিজেকে বাঁচাবার জন্যে গোপাল-টোপাল আলবাল বকছে। আমি সাধুবাবাকে বললাম, একটু বসুন। জল সেরে আসি। এই বলে সোজা ঘাটবাবুর ঘরে গিয়ে বললাম, পোস্টমর্টেমের রিপোর্টটা একটু দেখি।
রিপোর্টের ফোটোকপিটা হাতে নিয়ে খুঁটিয়ে পড়লাম। অত তো ইংরিজি জানি না। মাধ্যমিক অবধি বিদ্যে। তবু ইনট্যাক্ট হাইমেন, ভার্জিন এইসব শব্দ পরিষ্কার পড়তে পারলাম। তখনই প্রথমবারের জন্যে মাথাটা কেমন হয়ে গেল। ভাবলাম, এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সব কিছু কি জানি?
ফিরবার পথে হঠাৎ মাংস পোড়ার গন্ধ ছাপিয়ে নাকে ঢুকল কদমফুলের মাতাল করে দেওয়া সুবাস। অথচ এদিকে একটাও কদমগাছ নেই।
লেবুদা একটা গাঁজার বিড়ি ধরিয়ে তিন টানে সেটাকে শেষ করল। তারপর বলল, কী যেন বলছিলাম?
আমি তাড়াতাড়ি বললাম, ওই যে, কদমফুলের গন্ধ পেলে।
হ্যাঁ, শ্মশানে থাকি। মা ভদ্রকালীকে বুঝি। হাঁড়িকাঠ বুঝি, তন্ত্রমন্ত্র বুঝি। কারণবারি বুঝি। কিন্তু কদমফুলের গন্ধ বুঝি না। বেতের দোলনা বুকে নিয়ে মরে যাওয়া বুঝি না। একটা আঠেরো বছরের মেয়ের পেটে গোপাল আসছে—এসব বড় অস্বস্তিকর বিষয়। আমি তাড়াতাড়ি দাহ সেরে লোকগুলোকে বিদায় করতে চাইছিলাম। ফিরে এসে গোঁসাইবাবাকে বললাম, চলুন, হয়ে গেছে।
উনি বাধ্য ছেলের মতন আমার পেছন পেছন ইলেকট্রিক চুল্লির সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। পুলিশগুলোও আসতে চাইছিল। আমিই বললাম, আপনারা এসে কী করবেন? জুতোটুতো খুলতে হবে। বাইরেই দাঁড়ান। ওরা বাইরেই দাঁড়িয়ে রইল। আমি ভেতরে ঢুকে ফার্নেসের সুইচ অফ করে মেয়েটার স্বামীকে বললাম, নীচে চলুন।
তোমরা তো জানো, আমাদের ফার্নেসের সিস্টেম। লিভার ঠেলে চেম্বারটাকে একটু পেছনের দিকে হেলিয়ে দিলেই চুল্লির ভেতরের মড়াপোড়া ছাই নীচের বেসমেন্টে একটা জায়গায় গিয়ে পড়ে। ওখান থেকেই আমরা পার্টিকে অস্থি আর নাভি দিয়ে দিই। সেগুলো গঙ্গায় ভাসিয়ে দিয়ে সবাই বাড়ি ফেরে।
সেদিনও আমি নীচে গিয়ে ছাই ঘেটে গোঁসাইয়ের হাতে ধরে-থাকা মাটির মালসার মধ্যে কয়েক টুকরো অস্থি তুলে দিলাম। তারপর বিনোদিনীর নাভি খুঁজতে শুরু করলাম।
হঠাৎ ছাইয়ের মধ্যে থেকে বেরিয়ে এলো একটা ভ্রূণ। কী হল, নয়ন, তোমার বমি পাচ্ছে নাকি?
নয়ন মুখের ওপর হাত চাপা দিয়ে ওয়াক তোলা থামিয়ে বলল, না, না। তুমি বলো লেবুদা।
একটা ভ্রূণ। না, ভ্রূণ বলি কেন? প্রায় সম্পূর্ণ একটা শিশু। পুড়ে ঝলসে গেছে। হাত-পা-গুলো বেঁকে গেছে। চুল নেই চোখের পাতা নেই। তবু ঠোঁটের কোণে একটা সুন্দর হাসি লেগে রয়েছে।
আমি ভ্রূণটাকে দু-হাতের মধ্যে তুলে নিলাম। সঙ্গে সঙ্গে আমার হাতের পাতা পুড়ে গেল। এত গরম। এত ভারী। সোনার মতন উজ্জ্বল।
ছাইভর্তি মালসাটা আমার সামনে এগিয়ে দিয়ে গোঁসাইবাবা বললেন, দিন লেবুভাই। ওনাকে এর মধ্যে শুইয়ে দিন। আমি নবগ্রামে আমাদের কুঁড়েঘরের বারান্দায় সেই দোলনাটা খাটিয়ে এসেছি। এবার ঠাকুরকে ওর মধ্যে শুইয়ে দেব...বিনোদিনীর বেটাকে ওর মধ্যে শুইয়ে দেব। এই বলে তিনি অস্থির সঙ্গে ওই ভ্রূণটিকেও গঙ্গামাটির তাল দিয়ে ঢেকে বাইরে বেরিয়ে গেলেন। আমি ওদের সঙ্গে বেরোতে পারিনি। তারপর ওরা কে কোথায় গিয়েছিল তাও জানি না। আমি সেদিন সারারাত ওই বেসমেন্টের অন্ধকারে বসে ঈশ্বরের নষ্ট ভ্রূণের দুঃখে কেঁদেছিলাম।
একটুক্ষণ চুপ করে থেকে লেবুদা বলল, তবে আমি জানি তিনি আসবেন। তিনি আবার অন্য কোনো গর্ভে আসবেন। এটাই আমার বিশ্বাস।
ভোকু হঠাৎ জিগ্যেস করল, তারপর আর কখনো নবগ্রামে গিয়েছিলে, লেবুদা?
গিয়েছিলাম, তবে তাদের খুঁজে পাইনি। রমতা সাধু, বুঝলে? সাধুরা কখনো এক জায়গায় থাকে না। তাছাড়া পঞ্চায়তের সার্টিফিকেটে যে অ্যাড্রেসটা ছিল, সেটাও আমি ঠিক খুঁজে পাইনি।
বৃষ্টি থেমে গিয়েছিল। আমরা খালি বোতল ব্যাগে ভরে বাড়ির রাস্তা ধরলাম। এতক্ষণ বাদে হরিধ্বনি দিয়ে ভদ্রকালীর শ্মশানে একটা মড়া ঢুকছিল। লেবুদা ওদিকে এগিয়ে গেল।
ফেরবার পথে ভোকুটা এমন পাগলের মতন হাসতে শুরু করল, কী বলব? ফাঁকা রাস্তায় নেড়ি কুকুরগুলো অবধি ওর হাসি শুনে চিল্লাতে শুরু করল। আমরা বললাম, কী হল রে? খেপে গেলি নাকি?
দুঃখে হাসছি ভাই। ঘেন্নায় হাসছি। ঈশ্বরের ভ্রূণ! শালা, মাজাকি হচ্ছে? একটা বেওয়ারিস মেয়েছেলেকে খুন করে...।
খুন! আমরা আঁতকে উঠলাম। পোস্টমর্টেম রিপোর্টে তো অমন কিছু বলেনি।
ভোকু বলল—গাড়ি চাপা দিয়ে খুন করলে বোঝা যায় নাকি? সেই গাড়িকে তো কেউ খুঁজেই পায়নি। আর বাংলাদেশের বর্ডারে ওরকম কত একলা মেয়ে ঘুরে বেড়ায়। একটাকে ধরে সাধনসঙ্গিনীর লাশ বানিয়ে ফেলা কি আর এমন কঠিন কাজ?
আমরা বললাম, এই ভেবে হাসছিস?
ভোকু বলল, তার আগের ব্যাপারগুলো শোন। লেবুদা যে-সময়ের কথা বলছিল, তখন আমি সবে কুচবিহার হাসপাতালে জয়েন করেছি। হঠাৎ পুরো জেলা জুড়ে হুলুস্থুলু। কী ব্যাপার? না, রাজমাতা মন্দির থেকে রাজার আমলের সোনার বালগোপালের মূর্তি চুরি হয়ে গেছে।
জেলা প্রশাসনের তো পেছনে আছোলা বাঁশ। দাঙ্গা লেগে যায় আর কি। পুরো কুচবিহার জেলাটাই পুলিশ আর প্যারা মিলিটারি দিয়ে কর্ডন করে ফেলল। কোনো লাভ হল না। সে মূর্তি আজও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পঙ্কা আমতা আমতা করে বলল, তুই কি বলতে চাইছিস ওই মূর্তিটাই বিনোদিনীর পেটে...?
তাছাড়া আবার কী? জটা দাড়িওলা ওই ডোমটাকে দু-বছর আগেও কুচবিহার হাসপাতালের মর্গে কাজ করতে দেখেছি। অটোপ্সি দেখেছিস কখনো? দেখতে যাস না, বমি করে ফেলবি। শুরুতে গলা থেকে তলপেট অবধি ফালি করে, সাঁড়াশি দিয়ে স্টারনাম উলটে লাশকে রেডি করে দেওয়ার কাজটা ডোমেরাই করে। ডাক্তারবাবু এসে কোনোরকমে ডোমের সঙ্গে কনসাল্ট করে রিপোর্ট লিখে বেরিয়ে যান। তারপর ওই যে ক্রস সেলাই, সেটাও দেয় ডোমেরাই। ডাক্তারবাবু বেরিয়ে যাবার পরে নির্ঘাৎ ওই শালা ডোম বিনোদিনীর পেটের মধ্যে সোনার বালগোপালকে ঢুকিয়ে দিয়ে সেলাই করে দিয়েছিল।
ও একা এই কাজটা করেছিল নাকি একটা গ্যাং পেছনে ছিল জানি না। আমি তো পুলিশ নই। তবে যারাই করে থাকুক, তারা জানত, কর্ডন এড়িয়ে মূর্তিটাকে কলকাতা অবধি নিয়ে আসার জন্যে এর চেয়ে সেফ রাস্তা আর হয় না। পুলিশের ভ্যানের মধ্যে শুয়ে থাকা ডেডবডির পেটের মধ্যে পুরে...ওহো। ব্রিলিয়ান্ট ব্রিলিয়ান্ট! শুধু লেবুদাকে হিপনোটাইজ করে ফেলতে হবে। তাহলেই নাভির সঙ্গে সোনার গোপাল ফ্রি।
সেটা ওই লোকটা করেছিল। দারুণভাবে করেছিল। শুনতে শুনতে শালা আমিই আরেকটু হলে বিশ্বাস করে ফেলছিলাম। লেবুদাকে তো দেখলি, এখনো ঘোরের মধ্যে রয়েছে। বাকি জীবনটা ওই আধ্যাত্মিক ঘোরের মধ্যেই থাকবে।
বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছে ভোকুকে জিগ্যেস করলাম, কী করবি ভোকু? পুলিশকে জানাবি?
ভোকু খালি বোতলটা ডাস্টবিনের মধ্যে ছুঁড়ে দিয়ে বলল, কী হবে জানিয়ে? ও মূর্তি কবেই সোনার বিস্কুট হয়ে গেছে। মাঝখান থেকে লেবুদার মতন একজন মানুষের জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে। ছেড়ে দে। খোঁজ নিয়ে দেখবি, ঈশ্বর সবজায়গাতেই এইরকম।
মাতালের কথা। কিছু মনে করলাম না।
Comments
Post a Comment